Wednesday 7 February 2018

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সরকার পক্ষের নথি জালিয়াতির কিছু প্রমান

মামলার ১৯ নং সাক্ষী মোঃ মোস্তফা কামাল মজুমদার আদালতে প্রদত্ত তার সাক্ষ্যে বলেছেন, তিনি ১৯৯৩ সালের জানুয়ারী মাসের ৩১ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ইস্তফা দিয়ে প্রথমে বেসরকারী এবং তারপর সরকারী কলেজ হয়ে ১৯৯৪ সালে প্রশাসন ক্যাডারে চাকুরি নিয়েছিলেন।

এর একটু পরেই তিনি আবার তিনি বলেছেন, ১৯৯৩ সালের নভেম্বর মাসের ১৩ তারিখের একটি চেক তিনি প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি করেছেন!
যে লোক ১৯৯৩ সালের ৩১শে জানুয়ারী চাকুরি থেকে ইস্তফা দিয়েছে, সে কিভাবে ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে সেখানকার রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি দেয়? এই লোক নিজেই লিখেছেন, তিনি চাকুরি ছেড়ে চলে আসার পর উনার পরবর্তী হিসাব রক্ষক বারেক ভূইয়া এই হিসাব দেখতেন। ১৯৯৩ সালের এপ্রিল, জুলাই এবং অক্টোবরে যদি এন্ট্রি দেবার প্রয়োজনই হতো, তাহলে তো সেটি তখনকার কর্মরত হিসাব রক্ষক ২১ নং সাক্ষী বারেক ভূইয়াকে দিয়েই করানোর কথা ছিল।আরো আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, মোস্তফা কামাল প্রথমে বলেছেন, কার নির্দেশে উনি ফাইলে এইসব এন্ট্রি দিয়েছেন সেটা তার মনে নেই। এবং উনার পরে বারেক ভূইয়া এই ফাইল দেখতেন।

কিন্তু ২১ নং সাক্ষী বারেক ভূইয়া আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেছেন, মোঃ মোস্তফা কামাল মজুমদার চাকুরী ছেড়ে যাবার সময় এই ধরণের কোন ফাইল তাকে দিয়ে যাননি এমনকি এই ধরণের কোন ফাইল বা এতিম তহবিলের কোন ফাইল তিনি কখনো দেখেননি।
মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা ১৯ নং সাক্ষী মোঃ মোস্তফা কামাল মজুমদার আদালতে দাবী করেছেন, চাকুরি ছাড়ার পরের তারিখে রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি দেবার জন্য ১৪ নং সাক্ষী সৈয়দ জগলুল পাশা তাকে তার সরকারী কলেজের কর্মস্থল থেকে ডেকে এনেছিলেন।

সরকারী কলেজে কর্মরত একজন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাকে কিভাবে কোন সরকারি চিঠি না দিয়ে ডেকে এনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মত একটি গুরুত্বপূর্ন দফতরের ততোধিক গুরুত্বপূর্ন ফাইলে তার চাকরি ছাড়ার পরবর্তী তারিখে এন্ট্রি দেয়ানো কিভাবে সম্ভব? এই ঘটনা যদি ঘটে থাকে তাহলে তো জগলুল পাশা এবং মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধেই সরকারী ক্ষমতা অপব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় নথিতে অবৈধভাবে এন্ট্রি দেয়ার অভিযোগ গঠন করা উচিত, তাই নয় কী?

এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, ১৪ নং সাক্ষী সৈয়দ জগলুল পাশাই হচ্ছেন ৩২ জন সাক্ষীর মধ্যে একমাত্র সাক্ষী, যিনি দাবী করেছেন, তিনি এতিম তহবিল সংক্রান্ত ফাইলে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর দেখেছেন। তবে সেই স্বাক্ষরযুক্ত কোন ফাইলের নোটশিট বা অফিস আদেশের কোন কপি কিংবা ফটোকপি তিনি আদলতে দেখাতে পারেন নাই।

সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, ১৪ নং সাক্ষী সৈয়দ জগলুল পাশা এবং ১৯ নং সাক্ষী মোঃ মোস্তফা কামাল মজুমদারকে দিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ষড়যন্ত্র করে কিছু মিথ্যা কাগজপত্র তৈরী করেছেন যেগুলো আবার মারাত্মকভাবে ভুল।

দেখা যাচ্ছে, মোস্তফা কামালের তৈরী ডক্যুমেন্টে যে চেক নম্বর ও টাকার পরিমান দিয়ে জানুয়ারী মাসে এন্ট্রি দিয়েছেন, সেই একই চেক নম্বর এবং টাকার পরিমান দিয়ে তিনি চাকুরী ছাড়ার পরের তারিখ নভেম্বর মাসেও এন্ট্রি দিয়েছেন।

জানুয়ারী মাসের এন্ট্রি

নভেম্বর মাসের এন্ট্রি

এভাবেই অপরাধীরা অপরাধ করার পর তাদের অপরাধের চিহ্ন রেখে যায়।

কুয়েতের আমীর টাকা দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করার জন্য, সেটি এসেছিল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে। ঢাকাস্থ কুয়েতের দূতাবাস থেকে দেয়া চিঠিতে সেই কথা স্পষ্ট লেখা আছে।

কিন্তু সরকার পক্ষ আদালতে ব্যাংকে জমা দেয়া চেকের মূল কপি না দেখিয়ে একটি ঘষামাজা করা চেকের ফটোকপি উপস্থাপন করে।
তারা নিজেরাই আবার স্বীকার করেছে যে, চেকের এই ফটোকপিটি সৌদি আরবে অবস্থিত ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের বর্তমান কর্তৃপক্ষ নিজেদের বলে সনাক্ত করতে পারে নাই এবং এই চেকের মাধ্যমে কে টাকা প্রেরণ করেছে সেটা তারা জানে না। এটা জানার কথাও নয়। কারণ জাল চেকের ঐ রেকর্ড তো তাদের কাছে থাকা সম্ভবই নয়।

আওয়ামী লীগের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা হচ্ছে- এতিমের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কোন টাকা আত্মসাত হয়নি, সকল টাকাই 'জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট' একাউন্টে জমা আছে। বরং ২ কোটি, ৩৩ লক্ষ, ৩৩ হাজার ৩শ' ৩৩ টাকা ৪০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে এখন ৬ কোটি টাকারও বেশি হয়েছে। কাজেই সরকার পক্ষের আনা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ কোর্টেই মিথ্যা প্রমানিত হয়ে গেছে।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বারে বারে একই প্রশ্ন করা হয়- এতিমখানাটি কোথায়?
এতিমখানাটি বগুড়া জেলার গাবতলী থানার দাঁড়াইলে।



বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সকল এতিমদের তাড়িয়ে দিয়ে সেটিকে পরিত্যাক্ত করে রেখেছে।

No comments:

Post a Comment